লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি
নিজস্ব প্রতিবেদক ।
করোনার ধাক্কা সামলে রাজস্ব আদায়ে কিছুটা গতি ফিরতে শুরু করলেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায়ে ঘাটতি দিনে দিনে বিস্তৃত হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ঘাটতি প্রায় ৩১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।খবর ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমের।
পরবর্তী মাসগুলোতে লক্ষ্যমাত্রা বেশি থাকায় অর্থবছর শেষ নাগাদ এই ঘাটতি ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। মূলত করোনার কারণে স্থানীয় ও বিশ্ববাণিজ্যে গতিমন্থরতাই এর পেছনে অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
আয় কম হওয়ায় এর ধাক্কা লেগেছে সরকারের বাজেট ব্যয়েও। বিশেষত উন্নয়ন ব্যয় প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) গতকাল প্রকাশিত সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত ছয় মাসে বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয় (এডিপি) বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এটি টাকার অঙ্কে গত ১১ বছরে সর্বনিম্ন বাস্তবায়ন।
সরকার আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও আমদানি শুল্ক খাত থেকেই মোটা দাগে রাজস্ব আদায় করে থাকে। অর্থনীতিবিদ ও রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা বলছেন, করোনার কারণে অর্থনীতি প্রায় বসে গেছে। সেখান থেকে অর্থনীতি ধীরে ধীরে চলতে শুরু করলেও ব্যবসা-বাণিজ্য তথা মানুষের আয়ে সেই অর্থে গতি ফেরেনি। স্বাভাবিকভাবেই সরকারের আয়ও প্রত্যাশিত বাড়ছে না। তবে এনবিআরের নানামুখী চেষ্টায় গত কয়েক মাসে রাজস্ব আদায় বাড়তে শুরু করেছে। তা সত্ত্বেও গত ছয় মাসে সব মিলিয়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে মাত্র সোয়া ২ শতাংশের মতো। এছাড়া সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে আদায় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ। তবু লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি বাড়ছেই।
গত ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অবশ্য রাজস্বে এত বেশি ঘাটতির পেছনে অন্যতম কারণ বিপুল রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক গতি থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব আদায় বেড়েছিল গড়ে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ হারে। চলতি বছর করোনার প্রভাবে সার্বিকভাবে ব্যবসায় ও শিল্পোত্পাদনে গতি নেই। সেই বিবেচনায় আদায়ে প্রবৃদ্ধি আরো কমে যাওয়াই স্বাভাবিক। অথচ এবার এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫১ শতাংশ! সর্বশেষ গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছিল ২ লাখ ১৮ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় আদায় না বেড়ে উলটো কমে গিয়েছিল সোয়া ২ শতাংশ। অথচ চলতি অর্থবছরের জন্য ৫১ শতাংশ বাড়িয়ে এনবিআরকে আদায় করতে হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাকি ছয় মাসে এনবিআরকে আদায় করতে হবে ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার ওপরে।
অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাস্তবতা বিবেচনায় এবারের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়নি। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আদায়ে বেশি ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। অর্থবছর শেষে এই ঘাটতি ৮০ হাজার কোটি টাকায় ঠেকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
এত বেশি হারে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দেওয়ায় মাঠ পর্যায়ে হয়রানির অভিযোগও আসে বিভিন্ন সময়ে। ইস্যুটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর আগে কথা বলেছে। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের অস্তিত্বই টিকিয়ে রাখা যেখানে কঠিন হয়ে যাচ্ছে, সেখানে এত বেশি রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নেওয়ার কারণ আমাদের বোধগম্য নয়।খবর ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমের।