স্বপ্ন আর প্রত্যাশার পেছনে ছুটে চলা। একটি চেয়ার তৈরিতে চলে গেল ৫ বছর। চেয়ারটির নকশা, ওজন আর কাঠ ব্যবহারে আনা হয়েছে বৈচিত্র্য। ৭ ফুট ৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য আর ৩ ফুট ১ ইঞ্চি প্রস্থ। ওজন ১০ মণ ১০ কেজি। প্রায় ২০ ফুট সেগুন, মেহগনি আর আকাশি কাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছে এ আকর্ষণীয় চেয়ার। চেয়ারটি নাড়াচাড়া করতে ৮ জনের প্রয়োজন পড়ে। প্রতিদিন ২-৩ জন শ্রমিক ২-৩ ঘণ্টা করে কাজ করার পরও লাগলো এ সময়। জাতীয় পতাকা, নৌকা, জাতীয় ফুল, হাতির শুঁড় আর নানা জাতের ফুল ঠাঁই পেয়েছে রাজকীয় এ চেয়ারটির কারুকাজে। এখন চলছে চূড়ান্ত ঘষামাজা আর রং করার কাজ। আর ১-২ দিন গেলেই চেয়ারটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত হবে। এত সময়ক্ষেপণের রহস্য কিন্তু একটিই। চেয়ারটি যে প্রস্তুত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। কিন্তু চেয়ারটি মিস্ত্রি যে আহ্লাদে মনের মাধুরী আর আনন্দ-আবেগে তা তৈরি করেছেন তা জানেন না প্রধানমন্ত্রী। চেয়ারটির মিস্ত্রি আতিক হাসান (২৮) নামের টগবগে এক যুবক। দেশের প্রত্যন্ত পল্লীর এ যুবক বুকভরা স্বপ্ন আর প্রত্যাশা নিয়ে চোখ ধাঁধানো এই চেয়ার প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেবেন বলে তার দৃঢ় প্রত্যয়। কিন্তু কিভাবে তার এ উপহারটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাবেন তা জানা নেই তার। আর যদি তার এ চেয়ারটি প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ না করেন তা হলে তার দীর্ঘ স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর এ শ্রম পণ্ডশ্রমে পরিণত হবে এমন দুশ্চিন্তাও আছে তার। চেয়ারটির কারুকাজে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই দাম বলছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ টাকা দাম উঠেছে। অনেকেই নানা প্রলোভনে ফেলে চেয়ারটি কিনতে চাচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই তাকে সরাতে পারছেন না তার সিদ্ধান্ত থেকে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মানার্থে পরিচিত বা আপনজন কাউকেই বসতে দিচ্ছেন না চেয়ারটিতে। আগে একটি বদ্ধঘরে চেয়ারটির কাজ করলেও এখন শেষ পর্যায়ে কিছুটা উন্মুক্ত। লোকজন এ আকর্ষণীয় কারুকার্যময় চেয়ারটি দেখার জন্য ভিড় করলে তা দেখার সুযোগ দিলেও ছবি তুলতে দিচ্ছেন না তিনি। গতকাল সরজমিন কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের হিঙ্গাজিয়া বাজারে গেলে তালাবদ্ধ একটি ঘরে যত্ন করে রাখা চেয়ারটির পাশে দাঁড়িয়েই কথা হয় চেয়ার মিস্ত্রি মো. আতিক হাসান হৃদয়ের সঙ্গে। এসময় চেয়ারটি দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কুলাউড়ার দক্ষিণ হিঙ্গাজিয়া গ্রামের মৃত মো. রেনু মিয়ার ও আঙ্গুর বেগমের পুত্র তিনি। ২ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। আতিক ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে জানান প্রায় ১৮ বছর থেকে (কাঠ মিস্ত্রি) এ পেশার সঙ্গে জড়িত। তিনি ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মনেপ্রাণে ভালবাসেন। বঙ্গবন্ধুকে জীবিত না দেখলেও তার বীরত্ব আর নেতৃত্বের গল্প শোনে তিনি মুগ্ধ হয়ে তার ভক্ত। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু না থাকলেও তার সুযোগ্য উত্তরসূরি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এখন দেশ চালাচ্ছেন। আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন- আমার প্রিয় নেতার কন্যাকে আমার পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোন উপহার আমার নিজ হাতে তৈরি করে দেবো। আর এ ভাবনা থেকেই তৈরি করি চেয়ারটি। তিনি ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে বলেন, আমি গরিব মানুষ ইচ্ছা থাকলেও এটি ছাড়া অন্য কিছু কি দেয়ার সাধ্য আছে আমার? তিনি বলেন, চেয়ারটি তৈরির প্রথম দিকে চিন্তা ছিল কিভাবে তা নিখুঁত আর আকর্ষণীয় করা যায়। আর এখন কাজের শেষে চিন্তা হলো কিভাবে তা পৌঁছাব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি কি আমার মতো গরিবের ছোট এ উপহারটি গ্রহণ করবেন? তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন ভাই অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই উপহারটি তৈরি করেছি। আমি উপহারটি আমার প্রিয় নেতার পরিবারকে দিতে চাই এ বিষয়টি আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে খবরটা পৌঁছান। আতিক জানান, এর আগে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে একটি চেয়ার তৈরি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে দেয়ার জন্য কিন্তু সেটি তার মনের মতো না হওয়ায় তা বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রায় ১ লাখ টাকা দিয়ে তা কিনে নেন সিলেটর ধনাঢ্য ব্যক্তি বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ রাগীব আলী। এরপর তিনি টুঙ্গিপাড়া, জাতীয় জাদুঘরসহ নানা স্থানে ঘুরেছেন নতুন করে তৈরিকৃত চেয়ারটির নকশার ধারণা নিতে। পেয়েও যান নকশার ধারণা। এরপর বাড়ি ফিরে কারিতাস থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে কাজ শুরু করেন। কাজটি শেষ করার আগ পর্যন্ত রাত জেগে তাকে কাজ করতে হয়েছে। কারণ দিনের বেলায় তাকে কারখানা মালিকের কাজ করতে হয়। সেখান থেকে যে পারিশ্রমিক পান তা দিয়েই চলে তার অভাবের টানাপড়েনের সংসার। তাই বেশিরভাগ কাজ তিনি রাত জেগেই সেরেছেন। তিনি ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে জানান, চেয়ারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে দৈনিক মজুরির প্রাপ্য টাকা শেষ হয়ে গেলে অনেক দিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে। ঈদের সময় নতুন জামাকাপড় না কিনে ওই বাঁচনো টাকা দিয়েই চেয়ারটির নকশার কাজ করেছেন। তারপর তিনি মহা খুশি তার স্বপ্ন আর প্রত্যাশার সেই চেয়ারটি এখন প্রস্তুত করতে পেরেছেন বলে। এখন যদি তৈরিকৃত চেয়ারটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে পারেন আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি তার উপহারটি গ্রহণ করে চেয়ারটিতে বসেন তবেই তার আনন্দের তৃপ্তি আর দীর্ঘ কষ্টের সফলতা। আতিক জানান, শোকের মাস আগস্টেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার সুযোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এ মাসেই উপহার হিসেবে তার তৈরিকৃত চেয়ারটি তার হাতে তুলে দিতে চান। এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা আ স ম কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক, কাদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষ এ কে এম শফি আহমদ সলমান, কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম শাহজালাল, আওয়ামী লীগ নেতা মুহিবুর রহমান, যুবলীগ নেতা আবদুল হাই শামীম, ব্রাহ্মণবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাছুম চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তরুণ ক্রীড়া সংগঠক মিনহাজ উদ্দিন আহমদ কমরু, কুলাউড়া উপজেলা নবীন লীগের সভাপতি মো. জহিরুল ইসলামসহ এলাকাবাসী ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে জানান, বঙ্গবন্ধু পাগল এ ছেলেটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেয়ার জন্য বিগত ৫টি বছর থেকে নানা অভাব অনটনের মধ্যে থেকেও চেয়ারটি বানিয়ে যে ভালবাসার নজির দেখিয়েছেন তার জন্য সে সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তার এমন শ্রদ্ধাবোধ আর ভালবাসার জন্য আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বিনীতভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে তার তৈরিকৃত চেয়ারটি উপহার হিসেবে গ্রহণ করার জন্য আকুল আবেদন জানাই।