ভারতকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযানের তথ্য দিয়ে খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় বাংলা দৈনিক যুগশঙ্খ। রোববার পত্রিকাটির প্রথম পাতায় ‘উত্তর-পূর্বের জঙ্গি নির্মূলে এবার অভিযান বাংলাদেশে’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-বাংলাদেশের মাটিকে কিছুতেই উত্তর-পূবের্র জঙ্গিদের মুক্ত বিচরণ ক্ষেত্র হতে দেওয়া হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ঢাকা। সেই প্রতিশ্রুতি মতো সে দেশে ঘাঁটি গেড়ে থাকা উত্তরপূর্বাঞ্চলের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান তীব্র করেছে বাংলাদেশ সেনা। শুক্রবার থেকে জঙ্গি-বিরোধী যে অভিযান শুরু হয়েছে, আজ দ্বিতীয় দিনে তা আরও তীব্রতর হয়েছে। ভারতের সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) প্রতিবেশী বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গি-বিরোধী অভিযানের সত্যতা স্বীকার করেছে। বিএসএফ বলেছে, উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের উৎখাত করতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে সে দেশের সেনাবাহিনী।
শনিবার শিলংয়ে বিএসএফের আইজি ( মেঘালয় ফ্রন্টিয়ার) সুদেশ কুমার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে আত্মগোপনকারী উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানকে আজ আরও তীব্রতর করে তোলা হয়েছে।
তিনি জানান, ‘সে দেশে ঘাঁটি গাড়া উত্তর-পূর্বের জঙ্গিরা বাংলাদেশের মৌলবাদী শক্তিগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সন্ত্রাসবাদ চালাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার এদের অপরাধী হিসাবে বিবেচনা করে অভিযান শুরু করেছে।
বিএসএফের এই শীর্ষ আধিকারিক জানান, চট্টগ্রাম পার্বত্য এলাকা এবং ময়মনসিংহ অঞ্চলের গভীর অরণ্যে উত্তর-পূর্বের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলির বেশ কিছু গোপন শিবির রয়েছে। এদের উৎখাত করতে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে।
শিবিরে আত্মগোপনকারী জঙ্গিদের গতিবধি নজর রাখতে বিএসএফ এবং বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড (বিজিবি)-এর মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান হচ্ছে নিয়মিত।
মিয়ানমার সীমান্তে সম্প্রতি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সাফাই অভিযান চালিয়েছে ভারতীয় সেনা। বিদেশের মাটিতে ঘাঁটি গেড়ে থাকা ভারতীয় জঙ্গিদের উৎখাতে বর্তমানে উঠে পড়ে লেগেছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। তারই অঙ্গ হিসেবে বাংলাদেশের মাটিতে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের ৩৯টি শিবিরের একটি তালিকা বিজিবি’র হাতে তুলে দিয়েছে বিএসএফ। গত বৃহস্পতিবার শিলংয়ে বিজিবি-বিএসএফের এক যৌথ সম্মেলন শেষ হয়েছে। সেই সম্মেলনে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গিদের তালিকাটি তুলে দেওয়া হয় বাংলাদেশের হাতে।
সীমান্তে চোরাচালানসহ বাংলাদেশে সক্রিয় নানা জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা নিয়ে ঢাকার কাছে আপত্তি জানিয়েছে বিএসএফ।
বিএসএফ কর্তার কথায়, ‘ভারতীয় ভূখণ্ডে নানা অনৈতিক কাজ করতে আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশের নাগরিকরা। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের কাছে আবেদন জানানো হয়। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে জাল নোটের প্রচলন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
বিএসএফের আইজি সুদেশ কুমার বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে জাল নোটের পাচার রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদনও জানিয়েছি আমরা। চারদিনের ওই বৈঠক শেষে বিএসএফ-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিজিবি প্রতিনিধি দলের প্রধান লতিফউল হায়দার অভিযোগ শোনার পর শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
সেই সঙ্গে তিনি জানান, বাংলাদেশের মাটিতে অবস্থানরত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অভিযান শুরু করেছে সেনাবাহিনী।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে বর্ডার আউট পোস্ট নির্মাণে ভারতীয় সড়ক ব্যবহারের অনুমতি ও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বিএসএফর কাছে। এ ব্যাপারে বিজিবিকে যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বিএসএফ। বিএসএফর দাবি, সে দেশের সঙ্গে অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। দু দেশেল ঝুলে থাকা সীমান্ত সমস্যাগুলি দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যাপারে সম্মত হয়েছে ভারত-বাংলা উভয়ই। এই সম্মেলন দুই প্রতিবেশির মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্ব, বিশ্বাস এবং সহযোগিতার সম্পর্ককে আরো মজবুত করেছে। বিজিবির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সৌহার্দের প্রতীক হিসেবে তাদের চেরাপুঞ্জি ভ্রমণে নিয়ে যান বিএসএফ আধিকারিকরা। সেখান থেকেই বিজিবির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ডাউকি সীমান্ত পেরিয়ে ঢাকা ফিরে যান।
এদিকে এনডিএফবি সংবিজিতপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গত কয়েক মাস ধরেই চলছে সেনা অভিযান ‘অপারেশন অলআউট’। এতদিন এই অপারেশনে ভুটান সেনার সহায়তা চায়নি নতুন দিল্লি। তবে মিয়ানমারে যখন আসামসহ উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ‘সার্জিক্যাল অপারেশন’ জোরদারভাবে অব্যাহত, ঠিক সেই সময়ে একইসঙ্গে ভুটান সেনার সঙ্গে কৌশলগত বোঝাপড়ার মাধ্যমে নিম্ন আসামের ভুটান সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে সংবিজিতপন্থী জঙ্গিদের সাফাই করার অভিযান নতুন মাত্রা লাভ করেছে।
জানাগেছে, অপারেশন অলআউট শুরু করার পর থেকে আলোচনা-বিরোধী এনডিএফবি ক্যাডার ও নেতাদের অধিকাংশই ভুটানের জঙ্গলে পালিয়ে যায়। এমতাবস্থায় ভারত-ভুটান সীমান্তেও নতুন করে এনডিএফবি’র বিরুদ্ধে জোর অভিযানে নেমেছে সেনাবাহিনী। নতুন দিল্লির আহবানে অভিযানে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে ভুটান সরকার।
উল্লেখ্য, এই অভিযান শুরুর ১২ ঘণ্টার মধ্যেই সংবিজিতপন্থী এনডিএফবি’র দুই দুর্ধর্ষ ক্যাডার ধরা পড়েছে। এই দুই ক্যাডারকে চিরাঙের মানস অভয়ারন্য (ভুটান সমীমান্তবর্তী এলাকা) থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানা গেছে।