প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। সেই সূর্য উদিত করতেই ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগের জন্ম।
আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মনোনীত হন। আওয়ামী লীগ ত্যাগ-তিতীক্ষার মাধ্যমে বাংলার মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। দেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফাসহ প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে আওয়ামী লীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস বাঙালি জাতির অর্জনের ইতিহাস; ত্যাগ-তিতীক্ষার ইতিহাস। ১৯৪৯ সালে জন্মের পর আওয়ামী লীগের শত শত নেতা-কর্মী কারাবরণ করেছে; অত্যাচার, নির্যাতনে অনেকে মৃত্যুবরণ করেছে। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জাতি গঠনে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করছে।
তিনি বলেন, শহীদ মিনার নির্মাণ প্রকল্প, একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ঘোষণা বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য, কলা প্রতিটি বিষয়ে পূর্ণতা এসেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার মানে হচ্ছে বাঙালির আর্থ-সামাজিক উন্নতি ও তাদের কিছু প্রাপ্তি। ঐতিহাসিক সমুদ্র সীমা বিজয় ও স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন এর সবগুলোই বঙ্গবন্ধু করে গিয়েছিলেন। আমরা শুধু এর বাস্তবায়ন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু তার বার্তা জাতির কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। দেশের মানুষ তার নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করেছে। বঙ্গবন্ধু তথা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
তিনি বলেন, উপমহাদেশের প্রাচীনতম দলগুলোর একটি আওয়ামী লীগ। জাতির জনককে হত্যার পর ইয়াহিয়া স্টাইলে আওয়ামী লীগ নিধন শুরু হয়। শত প্রতিকূলতার মাঝেও আওয়ামী লীগ টিকে আছে। আদর্শের ওপর ভিত্তি করে যে দল প্রতিষ্ঠিত সে দলকে কেউ ধ্বংস করতে পারে না। আওয়ামী লীগকে কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। প্রতিকূলতার মাঝেও আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে আওয়ামী লীগকে দায়িত্ব দিয়েছিল দেশের মানুষ। সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে আসছে। দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রতীক হচ্ছে নৌকা। উজানে নাও ঠেলে ঠেলে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত বাঙালি জাতির জন্য ছিল স্বর্ণযুগ। ওই সময়ে বাঙালি জাতি তার আত্মমর্যাদা পেয়েছে। এরপর ২০০৮ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দেশের ক্ষমতায় রয়েছে। বিশ্বমন্দার পরও দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাঙালি জাতি বিশ্বব্যাপী আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে। কোনো ত্যাগই বৃথা যায় না।
দেশের বড় বড় অর্জনগুলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই এসেছে। দেশকে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দেশের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
আওয়ামী লীগে সভানেত্রী বলেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্যতা হ্রাস, সামাজিক উন্নয়নসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে নিজেদের অর্জনগুলো আদায় করে নিচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া এই দেশ পিছিয়ে যেতে পারে না। বাংলাদেশ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেশ, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এটা দেখিয়ে দিয়েছে। একটু উৎসাহ দিলে বাঙালি যেকোনো কিছু অর্জন করতে সক্ষম।
এই বিষয়ে আলোচনায় আরও অংশ নেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং স্বতন্ত্র সদস্য হাজী মো. সেলিম।