চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় মাহমুদুল হক ওরফে মাহফুজুল হক নামে এক যুবলীগ নেতা ও ইউপি সদস্যের বাড়ির পুকুরে অস্ত্র ও গুলি পেয়েছে পুলিশ। গত সোমবার রাতে সিআইডি ও সাতকানিয়া পুলিশ প্রায় দেড় ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে পলিথিন ও চটের বস্তায় মোড়ানো এ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে। অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার তৈরি একটি টু টু রাইফেল ও তিনটি এলজি। রয়েছে ৬ রাউন্ড গুলি, ৩ রাউন্ড ৭ পয়েন্ট ৬৫ রাইফেলের গুলি, ৭ রাউন্ড বন্দুকের কার্তুজ ও একটি কিরিচ।
সিআইডির পরিদর্শক মো. ওবায়দুল হক ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে জানান, চাঞ্চল্যকর একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার মাহফুজুল হকের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা গ্রামে তার বাড়ি সংলগ্ন পুকুর থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মাহফুজকে আসামি করে সাতকানিয়া থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে। মাহফুজুল হক স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তিনি এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং ইউনিট যুবলীগের সভাপতি।
জানা গেছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এওচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাফেজ আহমেদের (৫৫) সাথে যুবলীগ নেতা মাহফুজুল হকের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। গত ৭ জানুয়ারি গভীর রাতে হাফেজ আহমেদের বাড়িতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। হামলায় হাফেজ আহমেদের ছেলের শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম (৪২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় হাফেজ আহমেদ বাদী হয়ে নজরুল ইসলাম মানিক নামে এক ব্যবসায়ীসহ ১০ জনকে আসামি করে সাতকানিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সিআইডির পরিদর্শক মো. ওবায়দুল হক ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে জানান, হাফেজ আহমেদের বাড়িতে হামলার পেছনে নজরুল ইসলাম মানিক নামে এক ব্রিকফিল্ড ব্যবসায়ীর হাত রয়েছে বলে মাহফুজ এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচার করতে থাকে। মামলাটি সিআইডিতে আসে গত ২৫ মার্চ। সিআইডির তদন্তে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের সাথে মাহফুজের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট মাহফুজসহ চারজনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। গ্রেফতার হওয়া অপর তিন জন হলেন নুরুল আলম, মো. আমিন ও ল্যাদা আমিন। এদের মধ্যে মাহফুজ ও ল্যাদা আমিনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মাহফুজ তার কাছে অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার করেন। তবে এসব অস্ত্র সম্প্রতি গণপিটুনিতে নিহত চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কুখ্যাত কালাইয়া ডাকাতের বলে তিনি দাবি করেন।
মো. ওবায়দুল হক জানান, হাফেজ গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। এ ঘটনায় হাফেজের সাথে মাহফুজের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। আবার হাফেজ আহমেদের দায়ের করা হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন নজরুল ইসলাম মানিক। এ নিয়ে এ দুজনের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাহফুজ হাফেজকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তবে হত্যার দায় নজরুলের ওপর চাপানোর কৌশল হিসেবে সম্প্রতি হাফেজের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন মাহফুজ।