কেরানীগঞ্জের রাজৈন্দ্রপুরে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পশ্চিম পাশে ১৯৪ দশমিক ৪১ একর জায়গার ওপর নির্মিত হয়েছে বৃহত্তম এ কারাগার। এটিকে ‘এশিয়ার মডেল কারাগার’ হিসেবে বলছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ কারাগারে ৫০০০ পুরুষ ও ২০০ নারী বন্দির ধারণক্ষমতা রয়েছে। যা এশিয়ার সবচেয়ে বড় কারাগার দিল্লির তিহার জেলের ধারণক্ষমতার সমান। বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এ কারাগারের সীমানা প্রাচীর। ২৫ ফুট উচ্চতার এ সীমানা প্রাচীরের চারদিকে ৪০ ফুট উঁচু ৪টি ওয়াচ টাওয়ার। ঢাকা গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী স্বর্ণেন্দ্র শেখর মণ্ডল ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে জানান, ইতিমধ্যে ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। শিগগিরই কারাগারটি উদ্বোধন হবে। এ কারণে বাকি কাজ দ্রুত শেষ করা হচ্ছে। কারাগারের দক্ষিণ দিকে সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে ফাঁসির মঞ্চ। কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রচুর পরিমাণ ফাঁকা জায়গা রেখেই আধুনিক ব্যবস্থাসমৃদ্ধ নতুন কারাগারটি তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশের কারাগারের মতো এখানে ছয়তলা বিশিষ্ট ৮টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ভবনে ৫০০ বন্দিকে রাখা যাবে। গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের মতোই এটিকেও চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কারাগারের বাইরের অংশে কারা কর্মকর্তাদের আবাস, ২০০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, অপরাধীদের জন্য চারতলাবিশিষ্ট চারটি ভবন তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য ৬০টি বিশেষ কক্ষ থাকছে। এর পাশাপাশি নারী, কিশোর অপরাধে অভিযুক্ত কিশোর বন্দি ও মানসিক ভারসাম্যহীন বন্দিদের জন্য রয়েছে বিশেষ সেল। কারাগারের বাইরে কর্মরত কর্মকর্তাদের ৫০টি পরিবারের জন্য আলাদা ইউনিট ও কর্মচারীদের ৩৫০টি পরিবারের জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ করা হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনোদনে অফিসার্স ক্লাব, কর্মচারীদের জন্য স্টাফ ক্লাব, স্কুল, লাইব্রেরি, মসজিদ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সভার জন্য অডিটোরিয়ামও হচ্ছে। এছাড়া কারাগার কম্পাউন্ডে এক হাজার কারারক্ষীর থাকার জন্য ব্যারাক নির্মাণ করা হচ্ছে, যার মধ্যে ৩০০ কারারক্ষী থাকার ব্যারাক নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ২০০৬ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর একনেকে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়ার পর থেকে শুরু হয় জমি অধিগ্রহণের কাজ। ২০০৭ সালে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়। জমি অধিগ্রহণের সময় জমির মালিকদের রিট আবেদনের কারণে কিছু দিন কাজ বন্ধ থাকে। পরে ভূমি উন্নয়ন, কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি করা হয়। ২০০৬ সালে অনুমোদন পাওয়া এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩১৭ কোটি ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন সময়সীমা ২০১০ সালের জুন থেকে বাড়িয়ে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। একই সঙ্গে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৩৩৭ কোটি ৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এরপর আবারও দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পে ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালে তৃতীয় দফায় আবারও ব্যয় ৬৯ কোটি ২৬ লাখ ১২ হাজার টাকা বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয় ৪০৬ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকা গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে জানান, পুরুষ বন্দিদের থাকার জায়গার কাজ শেষ হয়েছে এটি খুব শিগগিরই চালু করা যাবে। তবে মহিলা বন্দি রাখার যে সেল তার অনেক কাজ বাকি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। ওই সময়ের আগেই আমরা শতভাগ কাজ শেষ করতে পারবো।