ঈদকে সামনে রেখে বেশ ব্যস্ত হয়ে উঠেছে পাবনার তাঁত পল্লিগুলো। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তৈরি করা হচ্ছে নানা ধরনের বাহারি শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা। পুরুষ কারিগরের পাশাপাশি ব্যস্ত নারী কারিগররাও। যেন কারও হাতে সময় নেই। কেউ সুতা কাটছেন, কেউ সানা বাঁধছেন, কেউ সুতা রং করছেন। কেউ বা শুকাচ্ছেন, যেন কারও ফুরসত নেই।
পাবনার তাঁতিদের তৈরি শাড়ি দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক স্থীতিশীলতার কারণে শঙ্কামুক্ত ভাবে কাজ করছে শ্রমিক মালিক সবাই।
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, জামদানি, সুতি কাতান, চোষা, বেনারসি, শেট নামে শাড়ি তৈরি হচ্ছে পাবনার তাঁত পল্লিগুলোতে। এ ছাড়া বিভিন্ন নবাবী নামের লুঙ্গিও তৈরি করছে তাঁতিরা। জেলার ঈশ্বরদী, জালালপুর, একদন্ত, চাচকিয়া,নতুনপাড়া,দোগাছি, নিশ্চিন্তপুর, শিবপুর, বগদী, সাঁথিয়া, লক্ষীপুরসহ জেলার প্রায় ৬০ টি গ্রামের তাঁত পল্লিতে ঢুকলে খট খট আওয়াজই বলে দেয় এরা কতটা ব্যস্ত।
বিদেশে ঈশ্বরদী বেনারসির ব্যাপক চাহিদা থাকায় এখানকার কারিগররা আরও ব্যস্ততার মধ্যদিয়ে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়াও চাচকিয়ার লুঙ্গি ও দোগাছির সুতির শাড়ি সারাদেশ ব্যাপী সমাদৃত।
বর্তমানে তাঁত পল্লিগুলোতে বিভিন্ন দামের বাহারি সব শাড়ি তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে কটন, কাতোয়াল, জুটনেট, উপেরা কটন, উপেরা সিল্ক, উপেরা কাতোয়ালের কদর রয়েছে সবচেয়ে বেশি। দেশের চাহিদা মিটিয়েও মধ্যপাচ্য, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে এখানকার শাড়ি। তবে তাঁতের উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়তে হচ্ছে এর সঙ্গে জড়িতদের। তবে প্রান্তিক তাঁতিরা রয়েছে নানা সমস্যার মধ্যে। কেউ কেউ দাদন নিয়ে এ ব্যবসায় টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। মাত্র তিন-চারটি তাঁত নিয়ে কোনোভাবে একটি বিশাল পরিবারের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছেন।
এদিকে মহাজনরাও সময়মতো পণ্য বিক্রির টাকা না দেওয়ায় নানা দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে প্রান্তিক তাঁতিদের। সুতার বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে এই এলাকার তাঁত মালিকদের। তার পরেও ঈদ ঘিরে তাঁত কারখানাগুলোতেও শ্রমিকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। আগের চেয়ে শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ বেশি।
ঈদ উপলক্ষে তাঁতপল্লিগুলোতে কাজের সুযোগ থাকে বেশি। বাড়তি আয়ের জন্য অন্যান্য জেলা থেকেও শ্রমিকরা এসে কাজ করছেন এখানে। ঈদ বোনাস না পেলেও বাড়তি আয় করতে পেরে খুশি এদের অনেকেই।
ঈশ্বরদীর বেনারসি ব্যবসায়ী জাবেদ আলী জানান, এখানকার শাড়ির ব্যাপক চাহিদা। এখান উৎপাদিত শাড়ি সারাদেশ সমাদৃত। সবচেয়ে বেশী চাহিদা রয়েছে রেশমী, কাতান, দুলহান,ব্যানারসী, জুটজামদানী।