কুমিল্লায় পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় গৃহকর্মীকে নির্যাতনে হত্যার ঘটনায় ২৬ ঘন্টাও হয়ে গেলেও এখনো কোন মামলা হয়নি। সাড়ে তিন বছর ঐ পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় কাজ করলেও নিহত ঐ গৃহকর্মী রুমা আক্তারকে দেয়া হয় নি বেতন বা সম্মানী। বুধবার ৫টার পর থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী আটক লিপি আক্তারকে ডিউটি অফিসারের রুমে বসে থাকতে দেখা গেছে। নিহত গৃহকর্মী রুমা আক্তারের বাবা ও আত্মীয়রা তার লাশ নিতে কুমিল্লা কোতয়ালী থানায় এসেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানার নাসিরনগর ১২নং হরিপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো:জামাল মিয়া জানান, খবর পেয়ে আমরা এসেছি। যারা অসহায় মেয়েটিকে মেরেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। দোষীদের বিচারের দাবি জানাই। রুনা আক্তারের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে নিয়ে যাবো এলাকায় নিয়ে যাওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে এসআইয়ের বাসায় গৃহকর্মীকে নির্যাতনে হত্যার অভিযোগের ঘটনা কুমিল্লা জুড়ে চঞ্চলতা সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য, কুমিল্লায় পুলিশের জাহিদ মোল্লা নামে এক এসআইয়ের বাসার গৃহকর্মী রুনা আক্তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হয়। বুধবার দুপুরে ঐ এসআইয়ের স্ত্রী তাকে কুমিল্লা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসে। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক রুনা আক্তার নামের (৩০) ঐ কর্মীকে মৃত ঘোষনা করলে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায় এসআইয়ের স্ত্রী লিপি আক্তার। পরে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুমিল্লা কোতয়ালী থানায় নিয়ে আসেএসআই জাহিদ মোল্লার আটককৃত স্ত্রীর নাম লিপি আক্তার। নিহত রুনা আক্তারের লাশ ময়না তদন্ত করা হয় বৃহস্পতিবার।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের কাছে আটক লিপি আক্তার ডিউটি অফিসরুমে প্লাষ্টিকের চেয়ারে আটক হওয়ার পর থেকে বসে আছেন। অনেকে পত্রপত্রিকায় দেখে ওই নারীকে দেখার জন্য ডিউটি অফিস রুমে ভিড় করে।
অভিযুক্ত লিপি আক্তারের চেহারা বিমর্ষ অবস্থায় রয়েছে। তবে তার ছোট সন্তান ডিউটি অফিস রুমে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এদিকে এ ঘটনা শুনে স্বামী ফেনীর ফুলগাজী থানার এসআই জাহিদ মোল্লাকে ডিউটি অফিসারের রুমে দেখা গেছে। অভিযুক্ত লিপি আক্তার সাংবাদিক দেখলে নিজেকে লুকিয়ে রাখেন। কুমিল্লা শহরে কান্দিরপাড় জিলা স্কুল রোডের পাশে একটি ভবনে ভাড়া থাকেন ফেনী ফুলগাজী থানার এসআই জাহিদ মোল্লা ও তার স্ত্রী লিপি আক্তার।
ওই বিল্ডিংয়ের তাদের পাশে থাকা ভাড়াটিয়ারা জানান, পুলিশ কর্মকর্তার বাসা থেকে প্রায় চিৎকার শুনা যেত, তবে আমরা পুলিশের বাসা দেখে যেতাম না। তাদের সাথেও তেমন কথা হত না। এখানে ভাড়া থাকার কিছুদিন পর থেকে মাঝে মধ্যে চিৎকার শুনা যেত। এদিকে গতকাল রাত ৯টায় কোতয়ালি থানায় এসেছেন হতভাগী রুনা আক্তারের আত্মীয় স্বজন ও এলাকার ১৫জন। এদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানার নাসিরনগর ১২নং হরিপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো:জামাল মিয়া জানান, খবর পেয়ে আমরা এসেছি। যারা অসহায় মেয়েটিকে মেরেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। দোষীদের বিচারের দাবি জানাই। রুনা আক্তারের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে নিয়ে যাবো।
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো:জামাল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, মেয়ের এলাকার হুমায়ূন নামের যুবকের মাধ্যমে গরিবের ঘরের মেয়ে রুনা আক্তারকে কাজে জন্য সাড়ে তিন বছর আগে আনা হয় পুলিশ কর্মকর্তার বাসায়। মেয়ের বাবা অনেক বার মেয়েটাকে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু দেয়নি । এমনকি সাড়ে তিন বছরে মেয়েটি যে কাজ করেছে তার কোন বেতনও দিত না। বিনা পরিশ্রমে করতো। মেয়ের মা অনেক আগে মারা গেছে। গরিবের সন্তান। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই এলাকাবাসী ।
এদিকে রুনা আক্তারের বাবা নোয়াব আলী (৬৫) বলেন, সাড়ে তিন বছর আগে রুনা কাজ করতে এসেছে। আমাকে বলা হয়েছে মেয়ে অসুস্থ। অথচ কালকে দুপুরে মারা গেছে। আমিসহ এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বারসহ ১৪/১৫জন এসেছে। তারা যেই সিদ্ধান্ত নিবে আমি সেই সিদ্ধান্তের প।ে আমার দ্বিতীয় মেয়ে রুনা আক্তার।
কোতয়ালি থানার ওসি খোরশেদ আলম জানান, রুনা আক্তারের পরিবারের লোকজন এসেছে মামলা নেয়া হবে। অভিভাবকদের কাছে লাশ বুঝিয়ে দেবো। ময়নাতদন্ত হয়ে গেছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।