প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২২ (শনিবার) ১২:০১ এএম
আজ (২৬ নভেম্বর) শনিবার কুমিল্লা নগরীর ঐতিহ্যবাহী টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ।খবর ক্রাইম রিপোর্টার২৪.কমের।
সমাবেশস্থলে অংশ নেবে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা, কুমিল্লা উত্তর জেলা, কুমিল্লা মহানগর, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি। সমাবেশের দুই দিন আগেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কুমিল্লা নগরীতে ঢল নামতে শুরু করেছে দলটির নেতাকর্মীদের।
দলের র্শীষ নেতা খালেদা জিয়ার মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবি, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলের নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে বিএনপির চলমান বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোতে বিএনপির নেতাকর্মীদের সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় ফেলেছিল হঠাৎ করে ডাক দেওয়া পরিবহন ধর্মঘট। সব শেষে গত শনিবার দলটির সিলেট বিভাগের গণসমাবেশর সময়ই একই চিত্র দেখতে পেয়েছেন তারা। এ জন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে অনেকে দুই দিন আগেই চলে এসেছেন কুমিল্লায়।
বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে এরই মধ্যে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন কুমিল্লা নগরীর বিএনপির নেতাকর্মীরা। কুমিল্লা বিএনপির নেতারা বলছেন, দলের নেতাকর্মীসহ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটিয়ে স্মরণকালের বৃহৎ সমাবেশ করবেন তারা। এ জন্য সব বাধা উপেক্ষা করে গণসমাবেশ সফল করতে তারা ব্যাপক প্রস্তুতিও নিয়েছেন। বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ জন্য পাঁচটি ইউনিটের নেতাকর্মীরা দিন-রাত এক করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া কুমিল্লা টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠেয় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আপ্যায়নে ৫০টিরও বেশি গরু জবাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
কুমিল্লা বিএনপির নেতাদের প্রত্যাশা, সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে দলটির গণসমাবেশের সময় হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটের ঘটনা ঘটলেও কুমিল্লায় এমনটা হবে না। কারণ কুমিল্লার ভৌগোলিক অবস্থানই তাদের এই চিন্তা থেকে রেহাই দিয়েছে। এ জন্য পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়টি নিয়ে ভাবেছন না তাঁরা।
কুমিল্লা মহানগর ও জেলা বিএনপির একাধিক নেতার ভাষ্যমতে, কুমিল্লার গণসমাবেশ ঘিরে অন্যান্য বিভাগের মতো ঘটনা ঘটলে উল্টো সমস্যায় পড়বে সরকার ও পরিবহন মালিকরা। কারণ দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মধ্যবর্তী স্থান কুমিল্লা। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মধ্যবর্তী স্থানও কুমিল্লা। কুমিল্লা জেলার বাইরে চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নেতাকর্মীরা কুমিল্লায় আসতেও খুব একটা সমস্যায় পড়তে হবে না। ট্রেন ও সড়কের বেশ কয়েকটি পথে দুই জেলা থেকে দলটির নেতাকর্মীদের কুমিল্লায় প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। তবে এর পরও দূরের নেতাকর্মীদের সমস্যার বিষয়টি মাথায় রেখে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি কবির আহমেদ ক্রাইম রিপোর্টার২৪.কমকে বলেন, আমরা বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ধর্মঘটে যাব না।তাছাড়া পরিবহন বন্ধ থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন মালিকরা। তাই তাদের (বিএনপির) বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা স্বাভাবিক নিয়মের পরিবহন ব্যবস্থা চালিয়ে যাব।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির নেতা কাউসার জামান বাপ্পী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের নাভি হলো কুমিল্লা। এগুলো দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। আমার বিশ্বাস, সরকার চাইলেই কুমিল্লায় পরিবহন বন্ধ করে দিতে পারবে না। সুতরাং আমরা বিষয়টিকে মাথায়ই আনছি না। তার পরও আমাদের প্রস্তুতি তো রয়েছেই। এ ছাড়া সরকার এরই মধ্যে বুঝে গেছে, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের চাপ দিয়ে গাড়ি বন্ধ রেখে বিএনপির নেতাকর্মীদের জনস্রোত আটকে রাখা যায়নি।
এদিকে কুমিল্লায় সমাবেশের আগে ধর্মঘটে বন্ধ হয়ে যেতে পারে পরিবহন। তাই দলীয় নেতাকর্মীরা যারা আগে আসবে, তাদের থাকার জন্য নির্মাণাধীন ও নির্মিত ভবনে মোট ৭৮টি ফ্ল্যাট প্রস্তুত করেছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু।
সাক্কু বলেন, আমি এরই মধ্যে কুমিল্লা নগরীসহ জেলার ১৭টি উপজেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আসতে বাধা দেওয়ার সমস্যা হলে তারা যেন আগেই এসে খাওয়াদাওয়া ও থাকার সুযোগ পায় সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করছি। আমার টার্গেট ৪০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করা।
শনিবার গণসমাবেশ উপলক্ষে এরই মধ্যে নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি থাকবেন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে পুরো নগরী সেজেছে বিএনপির নেতাদের ব্যানার-ফেস্টুনে। এ ছাড়া জেলার ১৭ উপজেলায় সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী আসনের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ও সাবেক সংসদ সদস্যরা এলাকায় পোস্টার-ব্যানার সাঁটিয়েছেন। তারা কেউ পাঁচ হাজার, কেউ দশ হাজার লোক জড়ো করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির নেতারা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় শোডাউন করছেন। গণসমাবেশে আসার জন্য এলাকায় সভা করছেন।
শুক্রবার রাতে কুমিল্লা টাউন হল মাঠের সমাবেশস্থলে ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দলের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। তাদের অনেকে দলীয় স্লোগানে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখছেন।
কুমিল্লা বিভাগীয় গণসমাবেশ ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এ গণসমাবেশে আসবেন। পুরো জেলায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। শান্তিপূর্ণ এ সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটাতে চান তারা।
তিনি আরও বলেন, কুমিল্লা উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর এবং চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পাঁচটি ইউনিট নিয়ে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কুমিল্লার পাশাপাশি চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নেতারা আগে থেকেই তাদের ‘প্লেস’ নির্ধারণ করে রেখেছেন। সুতরাং কেউ আগে চলে এলেও তাদের থাকা-খাওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। এ ছাড়া কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকেও ২০ হাজার মানুষের খাওয়া ও নাশতার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস-আগ্রহ দেখে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, কুমিল্লার গণসমাবেশ সফল ও সার্থক হবে। খবর ক্রাইম রিপোর্টার২৪.কমের।