রোহিঙ্গা জঙ্গিরা আবার সংগঠিত হচ্ছে
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে দুটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের শুরু হয়েছে জঙ্গি তৎপরতা। রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শতাধিক রোহিঙ্গা জঙ্গি এ দুটি শরণার্থী ক্যাম্পে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে জানিয়েছে, দুটি ক্যাম্পে কর্মরত কয়েকটি এনজিওর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনুদানের বিপুল অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা। এই টাকা দিয়ে তারা ফের জঙ্গি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে।
শনিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের কালুর দোকান ও খুরুশকুল সেতু এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই রোহিঙ্গা জঙ্গিকে আটক করেছে র্যাব। তাদের কাছ থেকে বিপুল অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক দুই রোহিঙ্গা জঙ্গি দিয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। র্যাবকে জানিয়েছে, তারা ৪ বছর আগে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে চট্টগ্রামের পটিয়ায় অবস্থান নেয়। সেখান থেকে কক্সবাজার শহরে আসে পাঁচ-ছয় মাস আগে। এই দু’জন ধরা পড়ার পর রোহিঙ্গা জঙ্গিদের গোপনে সংগঠিত হওয়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। আটক ব্যক্তিরা হলো_ মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার মংডু শহরের উকিলপাড়ার মোহাম্মদ ইউনুছ ও মংডু শহরের জামবইন্না এলাকার মোহাম্মদ রফিক।
কক্সবাজারের র্যাব কর্মকর্তা মেজর আহমদ হোসেন মহিউদ্দিন ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে জানিয়েছেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িসহ কক্সবাজারের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় রোহিঙ্গা জঙ্গিদের নতুন করে তৎপরতার তথ্য র্যাবের কাছে রয়েছে। তবে জঙ্গিদের গোপন কোনো প্রশিক্ষণ ক্যাম্প রয়েছে কি-না এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, শনিবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে, কতিপয় রোহিঙ্গা জঙ্গি অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার শহরে অবস্থান করছে। ওই সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দুই রোহিঙ্গা জঙ্গিকে আটক
করা হয়। আটক দুই জঙ্গি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে লিপ্ত। এ ব্যাপারে আরও তথ্য সংগ্রহ ও অনুসন্ধান চলছে। তাদের সঙ্গে বিদেশি কোনো জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা রয়েছে কি-না তাও যাচাই করা হচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে জানিয়েছে, আটক ২ ব্যক্তি আরএসও প্রশিক্ষিত জঙ্গি। তারা বিস্ফোরক তৈরিতে দক্ষ। বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সংগঠিত করে পাহাড়ি এলাকায় সশস্ত্র সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তারা তৎপরতা চালাচ্ছে। এই জঙ্গি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আরএসওর এক অংশের কমান্ডার আফগানিস্তান ফেরত মুজাহিদ মাস্টার আইয়ুব।
কুতুপালং ক্যাম্পে নিয়মিত গোপন বৈঠক
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ১৩ হাজার। অথচ এই ক্যাম্পে তালিকাবহির্ভূত আরও এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। এ রোহিঙ্গাদের ওপর সরকারি কোনো সংস্থার নিয়ন্ত্রণ নেই। তাদের চলাফেরা ও গতিবিধির ওপর কারও কোনো নজরদারিও নেই। এই সুযোগ গ্রহণ করছে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা। তারা গোপনে ক্যাম্পে সংগঠিত হয়ে নিয়মিত বৈঠক করছে বলে একাধিক সূত্র ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শতাধিক রোহিঙ্গা জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করছে এই শরণার্থী ক্যাম্প।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে জানিয়েছে, কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে লন্ডাখালীর পাহাড়ে রাতে চলছে জঙ্গি প্রশিক্ষণ। পাহাড়ে রয়েছে একাধিক গুহা। আফগান ফেরত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা জঙ্গিকে কিছুদিন থেকে কুতুপালং ক্যাম্পে অবস্থান করতে দেখা যাচ্ছে। তারা রোহিঙ্গা জঙ্গিদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সূত্র ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে নিশ্চিত করেছে, কুতুপালং ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জঙ্গি নেতাদের মধ্যে রয়েছে আবু ছিদ্দিক ওরফে জঙ্গি ছিদ্দিক, মাস্টার রাকিব, মনিরুজ্জামান, হাফেজ জালাল, ইকবালসহ আরও কয়েকজন। এর আগে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আবদুস শুক্কুর ও শামশুল আলম নামে দুই রোহিঙ্গা জঙ্গিকে ক্যাম্প থেকে আটক করেছিল। সম্প্রতি তারা জামিনে মুক্ত হয়ে ফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে।
আসছে বিদেশি অনুদানের অর্থ কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাবেক এক রোহিঙ্গা নেতা ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে জানান, রোহিঙ্গাদের আর্থিক ও মানবিক সহায়তার কথা বলে ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে ইত্তেহাদুল জমিয়াতুল রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা ভয়েস, শরিকা আল হওয়াদি নামে কয়েকটি রোহিঙ্গা সংগঠন ৪৫০ কোটি টাকা পেয়েছে। এই টাকা গোপনে জঙ্গি তৎপরতার পেছনে ব্যয় হচ্ছে। সূত্র জানায়, ইত্তেহাদুল জমিয়াতুল রোহিঙ্গার সভাপতি আমেরিকা প্রবাসী ড. ওয়াকার উদ্দিন।
উখিয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী অভিযোগ করে ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক জঙ্গিদের সহযোগিতা দিচ্ছে তুরস্কের একটি সংস্থা ইনসামা ইয়ারদিনলাফ, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এনজিও মুসলিম এইড, ইসলামিক রিলিফ, ইমাম মুসলিম ও সমন্বিত মানবিক উদ্যোগ নামে কয়েকটি সংস্থা। এসব সংস্থার নামে রোহিঙ্গাদের মাঝে কোরবানির পশু এবং ত্রাণসামগ্রীও বিতরণ করা হয়।
উখিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে জানিয়েছেন, ‘ক্যাম্পের চারপাশ ঘেরা বেড়া না থাকায় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ক্যাম্পে কোন সময়ে কে আসছে, কে যাচ্ছে, সেটাও জানা সম্ভব নয়। তিনি জানান, গোপন সূত্রে কোনো খবর পাওয়া গেলে পুলিশ অভিযান চালায়। বিশাল পাহাড়ি এলাকায় হাজার হাজার ঝুপড়ি ঘরের মধ্যে পুলিশ যাওয়ার আগেই অপরাধীরা নিরাপদে গা-ঢাকা দেওয়ার সুবিধা পায়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে জানান, উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থানে হওয়ায় সহজে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করে এখানে বসতি স্থাপন করছে। এতে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে শরণার্থী মর্যাদা দান এবং মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। তাদের দ্বারা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি এবং নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তাই এই ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকার।