চেতনা নাশক ওষুধ প্রয়োগে প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা হত্যা, আসামি গ্রেপ্তার
রংপুর অফিস । গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধি
দীর্ঘ এক বছর পর রংপুরের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাবেক প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদকে (৫০) বাসের মধ্যে অজ্ঞান পার্টি সদস্যরা চেতনা নাশক ওষুধ/ দ্রব্যসামগ্রী প্রয়োগ করে হত্যা মামলার এক আসামি গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রংপুর জেলা।খবর ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমের।
গ্রেফতারকৃত আসামি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানার উত্তর রাজীবপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম নয়া মিয়ার ছেলে সাজু মিয়া (৪০)। রবিবার তার নিজ থানা এলাকা সুনদরগঞ্জ থেকে মামলাটির তদন্তকারী অফিসার পিবিআই রংপুর জেলার পুলিশ পরিদর্শক আবু হাসান কবির এক বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে।
এ ব্যাপারে রংপুর কোতয়ালী থানায় প্রথমে একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়। পরবর্তীতে ভিকটিমের স্ত্রী বাদিনী হয়ে অজ্ঞাত নামা আসামিদের বিরুদ্ধে রংপুর কোতয়ালী থানায় লিখিত এজাহার দিলে কোতয়ালী থানার একটি হত্যা মামলা (নং- ১০) রুজু হয়। মামলাটি থানা পুলিশ প্রথমে তদন্ত করলেও পরবর্তীতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশে পিবিআই রংপুর জেলা তদন্ত করে।
আজ সোমবার পিবিআই রংপুর জেলা কর্তৃক গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা যায়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ভিকটিম ডাঃ রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ (৫০) প্রায় ১ বছর যাবৎ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি গত বছরের ০৩ নভেম্ভর অফিসের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ওই দিন দুপুর অনুমান ১২টার সময় গোবিন্দগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড হতে নিশিতা নামক রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা রংপুরগামী বাসে উঠেন।
আসামিরা তাকে অনুসরণ করে উক্ত বাসে উঠে এবং বাসের মধ্যে তাকে অজ্ঞান করে তার পরিহিত প্যান্টের ডান পাশে চোরাই পকেটে রক্ষিত প্রায় ৪০ টাকা ও ভিকটিমের ব্যবহৃত স্যামসাং মোবাইল সেট ছিনতাই করে নেয়। উক্ত পরিবহন মিঠাপুকুর বাসষ্ট্যান্ডে এসে পৌঁছলে সকল আসামিরা সেখানে নেমে পরে। ঘটনার পর অপরাধীরা সকলে টাকা ভাগ করে নেয়।
এদিকে বাসটি বেলা অনুমান আড়াইটার সময় রংপুর বাস টার্মিনালে পৌঁছালে বাসের লোকজন ভিকটিমকে অজ্ঞান অবস্থায় সিটে পড়ে থাকতে দেখলে তাকে চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ভিকটিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন রাত্রি অনুমান ৯টা ৫০ মিনিটের সময় মৃত্যু বরণ করেন।
গ্রেফতারকৃত আসামিসহ তার সহযোগিরা মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি ও জিনের বাদশা সেজে, মানুষকে নকল স্বর্ণ দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া সহ বিভিন্ন অপকর্ম করে থাকে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। অত্র মামলা সংক্রান্তে আরো দুই জন আসামি জেল হাজতে আটক আছে। তারমধ্যে একজন আসামি বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
পিবিআই রংপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্লাহ কাওছার ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে জানান, ভিকটিম ডাঃ রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে গোবিন্দগঞ্জ থানায় কর্মরত ছিলেন। ইতিপূর্বে ভিকটিম ডাঃ রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ এর মৃত্যুর সংবাদ জানার পর পিবিআই রংপুর জেলা ঘটনার বিষয় উৎঘাটনের জন্যে ছায়া তদন্ত করে।
প্রাথমিক অবস্থায় মামলাটি থানা পুলিশ তদন্ত করে এবং একপর্যায়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশে পিবিআই রংপুর জেলাকে তদন্তভার অর্পন করলে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্লাহ কাওছার সার্বিক তত্ত্বাবধানে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আবু হাসান কবিরের নেতৃত্বে তদন্ত টিম গঠন করা হয়। মামলার মুল রহস্য উৎঘাটন সহ আসামিদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। মূল আসামি গ্রেফতার হওয়া ও রহস্য উন্মোচিত হওয়ায় ভিকটিমের পরিবারের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আবু হাসান কবির ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমকে জানান, আসামিরা খুবই চতুর। অনেক কৌশল অবলম্বন করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামিকে আজ সোমবার বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।
খবর ক্রাইম রিপোর্টার ২৪.কমের।